ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর মা দেল আফরোজ বেগম ও বড় ভাই জসিম উদ্দিন হাজারীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ রবিবার (২৪ মে) রাত ৯টায় ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযা শেষে শহরের মাষ্টার পাড়ায় সাংসদের পারিবারিক কবরস্থানে মা ছেলে দুজন একইসাথে শয্যা নিয়েছেন।


এ বিদায় চির বেদনার। সেই ছাপ দেখা গেল জানাযায় অংশ নেয়া প্রতিটি মানুষের চোখে মুখে। একইদিনে এভাবে দুজনের মৃত্যুর শোক সইবার ক্ষমতা কজনের আছে। সেই দৃশ্য দেখা গেল নিজাম উদ্দিন হাজারীর চোখেমুখেও। ছলছল চোখে মা ও ভাইয়ের জানাযায় শরীক হন তিনি। এক পর্যায়ে উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি।


উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদানকালে নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি বলেন, গত তিন দিন আগে তার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেটি নেগেটিভ ছিল। তার কিডনী জটিলতায় থাকায় হাত পায়ে পানি চলে এসেছিল। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছেন।


সাংসদ বলেন, আমার ভাই একজন শান্ত শিষ্ট মানুষ ছিলেন। আমি সংসদ সদস্য হলেও তিনি কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে আমার মা ‘আমার জসিম নেই’- দুবার বলে স্ট্রোক করে সাথে সাথে বাসাতেই মৃত্যুবরণ করেছেন।


তিনি বলেন, আমার আম্মা আমার ভাইকে একা ছেড়ে দেন নি। তিনিও যাচ্ছেন একসাথে কবরে। আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা আমার ভাই ও মাকে মাফ করে দেবেন।


তিনি বলেন, আমার আম্মা আমাদের একা কোথাও পাঠাতো না। আমরা হারিয়ে যাব ভেবে। তিনি আমাদের এভাবে এত যত্ম করে লালন পালন করেছেন। আমাদের মাথার উপরে যে ছায়া ছিল, আজকে থেকে তা সরে গেছে।

দেল আফরোজ বেগমের জানাযায় ইমামতি করেন ফেনী আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। জসিম উদ্দিন হাজারী জানাযায় ইমামতি করেন ফেনী বড় মসজিদের খতিব মাওলানা সাইফুল্ল্যাহ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দলমত নির্বিশেষে জানাযায় অংশ নেন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, আত্মীয় স্বজন, পরিবার-পরিজনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।


জানাযায় অংশ না নিতে জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা থাকলেও তাদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজার মানুষের উপস্থিতিতে ভরে ওঠে সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। তবে প্রত্যেককেই স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে দূরত্ব বজায় রেখে নামাযে অংশ নেন।


জানাযায় অংশ নেন ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান, পুলিশ সুপার পদে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জমান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বি.কম, এনসিসি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী পাপ্পু, জেলা যুবলীগ সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজীজ রাজীব, পৌর মেয়র হাজী আলাউদ্দিন, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি করিম উল্লাহ বি.কম, পৌর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী।


মতভেদ ভুলে জানাযায় শরীক হন জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার, সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, যুগ্ম-আহবায়ক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারিসহ অন্যান্যরাও।


এছাড়া ফেনীর সর্বস্তরের মানুষ জানাযায় শরীক হয়ে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।


আজ রবিবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে দশটার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান জসিম উদ্দিন হাজারী। পুত্রের মৃত্যুশোক সইতে পারেন নি মা দেল আফরোজ বেগম। ছেলের মৃত্যুর এক ঘন্টার ব্যবধানে তিনিও চলে যান পরপারে। তাদের মৃত্যুতে শোকের কালো মেঘ ঘিরে আছে ফেনীতে।