বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ মে) ভোররাত হতে বুধবার (২০ মে) বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ফেনী জেলা প্রশাসন।


আজ সোমবার (১৮ মে) বিকাল ৩টায় আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রচারিত সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে ফেনী ও এর উপকূলীয় অঞ্চল সমূহকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।


আজ বিকালে ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান জানান, ইতোমধ্যে ফেনীর সোনাগাজীসহ উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র সমূহ প্রস্তুত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন ও গবাদিপশু সরিয়ে আনতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এলেই আমরা কাজ শুরু করব।


এদিকে ফেনীর উপকূলীয় অঞ্চল সোনাগাজীতে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে বলে জানান সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব।


প্রস্তুতির বিষয়ে ইউএনও বলেন, উপজেলার ৫৬টি সাইক্লোন শেল্টারের ব্যবহার উপযোগী ৫২টি আশ্রয়দানের প্রস্তুতি চলছে। তবে উপকূলীয় চার ইউনিয়ন চর দরবেশ, চর চান্দিয়া, সদর ও আমিরাবাদে ২৫টি সাইক্লোন শেল্টার ও ৩৩টি স্কুল ঘর প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব মিলে ২৫ হতে ৩০ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেয়া যাবে। তবে করোনার কারনে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতে সোনাগাজী পৌর এলাকায় শেল্টারেও মানুষজন সরিয়ে আনতে হতে পারে বলেন জানান তিনি। তবে তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।


তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সিপিপির টিম সকল ইউনিয়নে প্রস্তুত রয়েছে। ১১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ১০ হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।


অন্যদিকে আজ সকালে ঘূর্ণিঝড় 'আম্ফান' পরিস্থিতি মোকাবেলায় দাগনভূঞা উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে উপজেলা রেসপন্স কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসান বলেন, ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ও ওয়ার্ড কমিটিকে দ্রুত সভা করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে ফেনীতে ৯০শতাংশ ধান কেটে ঘরে তোলা হয়েছে। বাকি ১০ শতাংশ ধান দুর্যোগের পূর্বে ঘরে তোলা যাবে।


আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রচারিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে ফেনীসহ উপকূলীয় জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।


আজ বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ঘূর্ণিঝড়টি অবস্থান করছিল।