পরশুরামে বোরো ধানে বিক্ষিপ্তভাবে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমের ধান ঘরে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে এ রোগের আক্রমণে শংকিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন উপজেলার কৃষকরা। এতে আতংকিত না হয়ে রোগদমনে ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান।


কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ধান কাটার ১-২ সপ্তাহ আগে এ রোগ বেশি আক্রমণ করে। তিনি বলেন, সপ্তাহে যদি অন্তত দুইবার হেক্টর প্রতি ৪০০ গ্রাম ছত্রাকনাশক ঔষধ ট্রুপার ও বাষ্টিং জমিতে স্প্রে করা সম্ভব হয় তাহলে এ রোগ থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।


কৃষকদের সহায়তার বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমি নিজে ও উপ-সহকারীরা সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ে কৃষকের খোাঁজখবর রাখছি এবং সমস্যা সমাধানে পরামর্শ দিচ্ছি।


উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ৬ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমির মধ্যে ২ হাজার ৪শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরা ধানের চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ১০-২০ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।


সূত্র জানায়, ব্রি ধান ২৮ ও ব্রি ধান ২৯ জাতের ধানে এ রোগের আক্রমণের হার তুলনামূলক বেশি। এছাড়া কলা ও আম চাষেও এ রোগের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়।


ব্লাস্ট রোগে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের বীরচন্দ্রনগর গ্রামের কৃষক মোঃ এমাম বলেন, কয়েকদিন পরেই জমির ধান কাটার সময় হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ কিছু ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ফলন অনুযায়ী এখন ধান ঘরে তুলতে পারব কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছি।


একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কালাম নামে অন্য কৃষক বলেন, ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে দেখে আমি বাজার হতে ট্রুপার নিয়ে আসি এবং তা জমিতে প্রয়োগ করলে এখন আর জমিতে এমন রোগের লক্ষণ দেখছিনা। কৃষি বিভাগের সহযোগিতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, শুধু এ সমস্যা না, এ মৌসুমেও আমি কোনদিন মাঠে এসে কৃষি কার্যালয়ের কাউকে খবর নিতে দেখিনি।


মির্জানগর ইউনিয়নে দায়িত্বরত কৃষি উপ-সহকারী সামছুল হুদা বলেন, ধানের শীষ বের হওয়ার আগে অর্থাৎ কাইচথোড় অবস্থায় স্প্রে করলে এবং শীষের ৫% বের হলে প্রয়োজনে আবার স্প্রে করলে এ রোগের আক্রমণের হার হ্রাস পায়।

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়নে ৩ জন উপসহকারী থাকার কথা থাকলে বর্তমানে আমি একজন কর্মরত আছি। এজন্য অনেক সময় হয়তো কৃষকের সাথে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজ করা সম্ভব হয়না। তবে আমি চলমান করোনা পরিস্থিতিতেও ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে সমন্বয় করে কৃষকদের সমস্যা সমাধানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।


উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা এটিএম খোরশেদ আলম বলেন, ব্রি-২৮, ২৯ ও ৫৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রমণ করছে। তিনি বলেন, গতকাল অফিসে বেশ কয়েকজন কৃষক ব্লাস্টে আক্রান্ত ধান গাছ নিয়ে অফিসে এসেছিল তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা পিন্টু কুমার দাস বলেন, বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ নিয়ে কৃষকরা জানানোর পর ওইসব গ্রামে গিয়ে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কিছু স্বার্থান্ধ কৃষক যাদের আমরা অনেক সময় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিতে পারিনা তারা আমাদের উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ আনছে।