বর্তমানে সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারী প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এ যুদ্ধে মানবজাতিকে রক্ষা করতে সম্মুখ যুদ্ধের সামনের সারিতে প্রাণপনে লড়াই করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। লড়াই করছেন জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা, গণমাধ্যমকর্মী ও অন্যান্য জরুরী সেবাকর্মে নিয়োজিত ব্যাক্তিরা। তবু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়রানি ও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা।


প্রত্যক্ষ ও বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া পাওয়া ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে সেইসব প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখেছেন ফেনী বিএমএ সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের রেস্টেরেটরী মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ সাহেদুল ইসলাম কাওসার। তার সেই লেখাটি দৈনিকফেনী.ডটকমের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হল-


১। সম্মুখ যোদ্ধা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হয়রানী-


এই ক্রান্তিলগ্নে জীবন বাজী রেখে স্বাস্থ্যসেবা কর্মে নিয়োজিত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা দায়িত্ব পালন শেষে আবাসস্থলে, পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসে কোয়ারেন্টাইনে, আইসোলেশনরত অবস্থায় নানারকম অমানবিকতার ও হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
কোয়ারেন্টাইন বা আইশোলেশনরত ব্যাক্তির কাছাকাছি-সংস্পর্শে না আসলে অন্যদের তো ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই। মনে রাখতে হবে আপনাদের ঘরে নিরাপদ রাখতে গিয়েই তারা পরিবার-পরিজন ছেড়ে কর্মস্থল হাস্পাতালে।


২। লাশ দাফনে সৎকারে বাধাদান-


লাশ দাফন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বাধা দিতে গিয়ে নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি। মৃতদেহ সক্রিয়ভাবে ভাইরাস ছড়ায় না। যারা প্রত্যক্ষভাবে দাফন কাজে জড়িত হন তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সতর্কতার সাথে এ কাজ সম্পন্ন করেন তারা। তাই একাজে জনগণের ক্ষতি হওয়ার কোন আশংকা থাকার কথা নয়। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, নিজ সন্তান ও অনেক জায়গায় যেখানে পরিত্যাগ করে যায় সেখানে ডেডিকেটেড কিছু স্বেচ্ছাসেবক এই মানবিক কর্মে যুক্ত হন ও সম্পন্ন করেন।


কিছু তথাকথিত অর্ধশিক্ষিত, কুশিক্ষিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পাতি নেতা, এলাকার মাস্তান সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে "এলাকা আক্রান্ত হবে" এই ধুয়া তুলে উপরোক্তরুপ অমানবিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। একবার নিজেকে ঐ অবস্থানে কল্পনা করুন। যেকোনো সময়েই আপনি, আপনার পরিজন ও আক্রান্ত হতে পারেন কারণ আপনার প্রতি ‘করোনা’ কোন করুণা করবেনা।


সাধারণ মানুষের আবেগ নিয়ে খেলবেননা।


বিবেকবোধ কে জাগ্রত করে মানবিক হোন!


পুনশ্চঃ- এই যুদ্বে সন্মুখ যোদ্ধা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সামরিক বাহিনীর সদস্যবৃন্দ, গণমাধ্যম কর্মী ও অন্যান্য জরুরী সেবাকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ সর্বোপরি সংবেদনশীল সক্রিয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতা।

 

লেখকঃ

সভাপতি

বিএমএ, ফেনী জেলা।