করোনাভাইরাস নিয়ে চীন-মার্কিন বিতর্ক চলছিলই। এবার আরেক ধাপ এগিয়ে এ বার চীন সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা দায়ের হল মার্কিন আদালতে। করোনাভাইরাস নিয়ে এই প্রথম চীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হল কোনও দেশে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি প্রদেশের পক্ষ থেকে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, চীন সারা বিশ্বের কাছে করোনাভাইরাসের তথ্য লুকিয়েছে, ভুল তথ্য দিয়েছে এবং নিজেদের দেশে নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। তাই মিসৌরিতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করার আবেদন জানানো হয়েছে আদালতে। যদিও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি ওই মামলায়।

‘চীনা ভাইরাস’ বলে করোনা নিয়ে বেজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রথম তোপ দেগেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার জবাবে শি জিনপিংয়ের পাল্টা তোপ ছিল, মার্কিন সেনাবাহিনীর থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, সারা বিশ্বে যেমন ছড়িয়ে পড়েছে করোনা, তেমনই বেইজিং-ওয়াশিংটন বাগযুদ্ধের আবহ ততই তপ্ত হয়েছে। উহানের ল্যাবে কৃত্রিম ভাবে তৈরি করে ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে তদন্তের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিযোগ সত্যি হলে তার ‘ফল ভুগতে হবে’ বলে হুমকি দিয়েছেন। অভিযোগ তুলেছেন, আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক কম করে দেখিয়েছে চীনা প্রশাসন।

সেই তপ্ত বাগযুদ্ধের আবহেই এ বার সরাসরি আদালতের দ্বারস্থ হল মিসৌরি প্রদেশের সরকার। মার্কিন সময় মঙ্গলবার মিসৌরির ফেডারেল আদালতে মামলায় অভিযোগ তোলা হয়েছে, চীন ইচ্ছাকৃত ভাবে সারা বিশ্বের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তার জন্য মিসৌরিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা মোকাবিলায় বহু টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা চীনকে দিতে হবে।

মিসৌরির অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক স্মিট আদালতে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রকৃতি এবং ভয়াবহতা নিয়ে বিশ্ববাসীকে মিথ্যে কথা বলেছে চীনের সরকার। যারা অভিযোগ তুলেছেন, তাদের চুপ করিয়ে দিয়েছে এবং এই মহামারির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’ চীন সরকারকে এর জন্য দায়ী করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও তুলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই), মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসের মতো করোনাপ্রতিরোধী অধিকাংশ জিনিসের জন্য এশিয়ার উপর ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল ইউরোপ-আমেরিকা। কিন্তু চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা এই সব জিনিসের মজুতদারি করছে। সেই বিষয়টি উল্লেখ করেও চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে মিসৌরি সরকার।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলায় মিসৌরি সরকারের সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ, অন্য কোনও দেশ বা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার মার্কিন আদালতের নেই। তবে সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলছে। সেই প্রচারে চীনের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস ইস্যুতে প্রচারে হাতিয়ার করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার রিপাবলিকান পার্টি। মিসৌরি প্রদেশেও রিপাবলিকান সরকার রয়েছে। তাই পর্যবেক্ষদের অনেকেই মনে করছেন, সাফল্যের আশা কম জেনেও ভোটের মুখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সূত্র: ইকনোমিক টাইমস।