‘বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর নিজাম উদ্দিন হাজারী। তিনি যেন অন্ধকার ঘরে আলোর মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সত্যিকারের নায়ক।’


আজ শনিবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে ভাসমান মানুষদের খাবার বিতরণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে এভাবে বর্ণনা করেন ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া সুলতানা রাত্রি।


করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে চলমান পরিস্থিতিতে অনেকে একবেলা-আধবেলা খেয়ে দিন পার করছে। একই অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে ফেনী শহরের রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ছিন্নমূল, পথশিশুসহ ভাসমান মানুষরা।


আয়ের পথ বন্ধ, চরম খাবার সংকটে দিনযাপন করছে এমন দুই হাজার মানুষকে প্রতিদিন খাবারের ব্যবস্থা করছেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদ এবং ছাত্রলীগের মেয়েরা। সারাদেশে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম চোখে পড়লেও, একমাত্র ফেনীর মেয়েদেরই দেখা গেছে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে মানুষদের সহায়তা করতে। স্বেচ্ছাসেবা সম্পর্কে জানতে দৈনিকফেনী ডট কমের মুখোমুখি হয় কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া সুলতানা রাত্রি।


কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদ বিবরণ তুলে ধরে রাত্রী বলেন, মাননীয় সাংসদের নির্দেশে পরিচালিত খাবার বিতরণের এ প্রক্রিয়া গত ৬দিন ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রতিদিন নিজেরাই রান্না করে ২ হাজার প্যাকেট খাবার শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে বিতরণ করে যাচ্ছি।


খাবার পেয়ে ছিন্নমুল মানুষের অনুভূতি জানতে চাইলে রাত্রি বলেন, মানুষগুলোর অনুভূতি চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়। তাদের চোখেমুখে খুশি এবং তৃপ্তির ছায়া জননেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি মহোদয়ের প্রতি সন্তুষ্টিরই বহিঃপ্রকাশ। রাত্রি বলেন, এমপি মহোদয় যেন তাদের অন্ধকার ঘরের দরজার আলোর মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো এক সত্যিকারের নায়ক।


এ উদ্যোগকে আপনি কিভাবে দেখেন তা জানতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগ সহ সভাপতি বলেন, এমপি মহোদয়ের এই উদ্যোগ সারা দেশে একটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, মানুষ শিখছে কিভাবে মাঠে থেকে, সকল শ্রেনীর মানুষদের পাশে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে জননেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। বঞ্চিত নিপিড়ীত মানুষের কন্ঠস্বর যে তিনি, তা এই কাজের মাধ্যমে আরো একবার প্রমাণ করে দিয়েছেন সারা দেশের মানুষের কাছে।


রাত্রী বলেন, ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরা এ কাজে যুক্ত হতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সচেতনতার সাথে আমরা কাজ করার জন্য বারবার সচেতন করেছি। প্রতি মুহুর্তে আমাদের খবর নিচ্ছেন সাংসদ, আমরা সুষ্ঠুভাবে সব কাজ সম্পন্ন করতে পারছি কিনা। মানুষের কাছে যাওয়ার এই সুযোগ আমাদেরকে অনেক কিছু শেখাচ্ছে, অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করছি।


রাত্রি বলেন, আমরা প্রতিদিন ২ হাজার মানুষের জন্য নিজেরাই কলেজ ক্যাম্পাসে রান্না করে তা প্যাকেট করে নিজেরাই বিতরণে বের হয়ে পড়ি। ছড়িয়ে পড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গায়। যেখানেই দেখি মানুষ না খেয়ে পড়ে আছে তাদের কাছে একটি প্যাকেট নিয়ে বলি, আমাদের নেতার জন্য দোয়া করবেন। মানুষগুলো প্রাণ ভরে দোয়া করে। এই কাজে প্রতিদিন কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদিকা দৌলত আর দোলা, ছাত্রলীগের কর্মী দিলারা সুলতানা মিলা, আয়েশা সিদ্দিকা রূপা, আইরিন আক্তার উর্মিসহ ২০ জনের মতো নারী নেত্রী ও কর্মী কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ কাজে প্রত্যেকটি কর্মী এতটাই আন্তরিক, তা আমাদের সারাজীবন মনে থেকে যাবে।


রাজনীতি এবং জনসেবার মধ্যে নিজেকে সম্পৃক্ত করার কারণ জানতে চাইলে রাত্রি বলেন, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি একটি রাজনৈতিক দল আওয়ামিলীগ, যার অপর নাম জনসেবা, যার জন্ম বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছেন, আর বঙ্গবন্ধু মানেইতো জনতার বন্ধু জনতার সেবক। তাই সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ছাত্র রাজনীতিতে আগ্রহী হয়েছি।


রাত্রী বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের আবেগের জায়গা, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে গড়ে দিয়ে গেছেন, আর বার্তা দিয়ে গেছেন মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তোমরা তরুণরা খবর নাও। ছাত্রলীগ করে আমি বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখতে পাই, কাছ থেকে অনুভব করতে পারি যা আর কোথাও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, রাজনীতি এবং জনসেবাকে আমি এক মনে করিনি কখনো, জনসেবা করার জন্য রাজনীতির প্রয়োজন নেই।


তিনি বলেন, আর মানুষের সেবা করার মাঝে মহান আল্লাহকে পাওয়া যায়। দেশের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় সেই ছোট্ট বেলায় যে ব্রত নিয়ে বড় হয়েছি সেই ব্রত রক্ষা করতে না পারলে জীবন অনর্থক।


একজন নারী হিসেবে দূর্যোগময় পরিস্থিতিতে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাত্রি বলেন, একজন নারী হয়ে আমি মনে করি দৃড় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেকে উপস্থাপন করার এই সুযোগটা সকল নারীর কাজে লাগানো উচিত। দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই কাজে প্রতিটি নারীর হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। পাশাপাশি সচেতনতার সাথে কাজ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি মহোদয়ের হাতকে শক্তিশালী করা উচিত যেন আগামীতে যে কোনো দূর্যোগ মোকাবিলায় আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি।


রাত্রি বলেন, প্রতিটি নারীকে মহান আল্লাহ দয়া ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করে পাঠিয়েছেন। আমাদের উচিত সেই ভালোবাসা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকে শিখিয়ে দেওয়া নারী মানে দূর্বল নয়। নারী মানে শক্তি, নারী মানে ভালোবাসার বন্ধনে বিশ্বকে বেঁধে রাখা।


সাদিয়া সুলতানা রাত্রি ফেনী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগে (সম্মান) ১ম বর্ষে পড়ছেন। একই সাথে কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতির দায়িত্বপালন করছেন। রাত্রি ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়ার তালতলা গ্রামের মোঃ নুরুল ইসলাম ও সাহেনা আক্তারের মেয়ে।