‘আইজ্জা ক'দিন খাইতাম হারিয়ের না, বা’জি। হেডের ভুখে কারো কাছে যাইতাম না হারিয়ের, কারোত্তে না চাইতাম হারিয়ের। আইজ্জা আঁরে বোলাই আনি হেগুনে হাতেত্তে খানা তুলি দিছে। আঁই আল্লাহর কাছে দোয়া করমু।’


আজ শনিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে ট্রাংক রোডে হাতে খাবার খেয়ে এভাবে নিজের অনভূতি প্রকাশ করেন বিবি রহিমা নামে এক ষাটোর্ধ্ব ভিক্ষুক। দিনে শহরের ভিক্ষা করে রাতে স্টেশনে শুয়ে দিন কাটান তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে চলমান পরিস্থিতিতে তার মত অনেকে একবেলা-আধবেলা খেয়ে কোনমতে দিন পার করছে। একই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে ফেনী শহরের রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ছিন্নমূল, পথশিশুসহ ভাসমান মানুষরা। আয়ের পথ বন্ধ তাদের, চরম খাবার সংকটে দিনযাপন করছে তারা।


আজ ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রতিশ্রুত খাবার পেয়ে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে বেশ কিছু মানুষের। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের মুখে খাবার তুলে দেবার ঘোষণা দিয়েছেন নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি।

পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খাবার রান্না করেছে ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ ও ছাত্রলীগের নেতৃরা। রান্না শেষে প্যাকেট করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বিলিও করেছেন তারা।


ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি তোফায়েল আহম্মদ তপু জানান, আজ শহরের ট্রাংকরোড, জেলরোডসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে খাবার বিলি করছে কলেজ ছাত্র সংসদ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শহরে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ছিন্নমূল, পথশিশুসহ মানুষদের হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দিয়েছি আমরা। এ খাবার তারা তৃপ্তির সঙ্গে খাচ্ছে। প্যাকেটে রয়েছে খিচুড়ি। একই সাথে করোনা সচেতনতা লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে।


তপু বলেন, বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) ফেনী কলেজ ছাত্র সংসদের নেতাদের ভাসমান মানুষদের খাবারে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন সাংসদ। তার নির্দেশনা মোতাবেক আজ থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেছি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাব।

 


শনিবার সকালে কলেজ প্রাঙ্গনে শুরু হয় রান্নার আয়োজন। কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া সুলতানা রাত্রী ও ফেকসু’র ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক নেত্রী ইসরাত চৌধুরীসহ ছাত্রলীগের ৩০ নারী কর্মী এতে অংশ নেয়। ঘুরে দেখা যায়, কেউ রান্নায় করছে, কেউ নিজ হাতে মাংস কাটছে, কেউ সেগুলো ধুচ্ছে, কেউ মসলা বানাচ্ছে। তাদের সবার মুখে আন্তরিকতা ছাপ, যেন এক উৎসবে শামিল হয়েছে সকলে।


সাদিয়া সুলতানা রাত্রি বলেন, কলেজ ছাত্র সংসদের সদস্য এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিলে আমরা প্রতিদিন নিজেরাই এ খাবার রান্না করবো। রাত্রি বলেন, শুধু ভামসান মানুষ নয়, শহরে অন্য যে সব প্রাণী অভুক্ত রয়েছে তাদের জন্যও খাবারের আয়োজন করতে সাংসদ মহোদয় আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ দুর্দিনে সাধারণ মানুষদের সহযোগিতায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে আমরা বেশ উৎফুল্ল।


এর আগে বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) জেলার ৫টি উপজেলায় ত্রাণ বিতরণকালে সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ‘আমার যা কিছু সম্পদ আছে তা আমি ফেনীবাসীর কল্যাণে, গরীব দুঃখী মানুষদের কল্যাণে ব্যয় করতে চাই। আমি চাই ফেনীর গরীব দুঃখী মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যতদিন থাকবে, ততদিন আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব তাদের পাশে এসে দাাঁড়াতে। ’


ওইদিন বিকালেই শহরের ২ হাজার ভাসমান মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি।


উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জেলার ৬টি উপজেলায় কর্মহীন ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা করেছেন ফেনী-২ আসানের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। সে সহায়তা শেষ না হতেই এবার শহরের রাস্তাঘাটে ভাসমান মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি।