অদম্য পরিশ্রম আর সাহসিকতায় ভর করে গ্রামীণ সংস্কার আর প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে ফেনীর নারীরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরুর খামার করে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন, তেমনি পরিবার ও সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন তারা। সেই সঙ্গে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা।


আজ ৮মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সেইসব সংগ্রামী ও পরিশ্রমী নারীদের কয়েকজনের গল্প তুলে ধরা হল।


সোনাগাজী উপজেলার সুজাপুর গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আব্দুল রাজ্জাকের মেয়ে ফিরোজা বেগম (৪৫)। ১৯৯৫ সালে ভাদাদিয়া গ্রামের মোঃ সিরাজের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। কৃষক স্বামী ও চার সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। এর পাশাপাশি তিনি নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদে ২০১৮ সালে দুটি গরু নিয়ে শুরু করেন তার ডেইরি ফার্ম। মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে তিনি এখন ৫টি গরু, হাঁস, মুরগী নিয়ে সমন্বিত খামারের মালিক। তীব্র ইচ্ছা শক্তি, কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতাই ফিরোজা বেগমের চালিকাশক্তি।


ফিরোজা বেগম বলেন, খামারে প্রতিদিন উৎপাদন হয় প্রায় ৩০ লিটার দুধ। একাই খামার পরিচালনা করছি। বর্তমানে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার বেশি আয় হয়ে থাকে।


একাগ্রতা আর প্রচেষ্টাই আজকে তাকে এ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে বলেন ফিরোজা। খামারের পাশাপাশি তিনি জমিতে ভুট্টা, হাঁস-মুরগী এবং মৎস্য চাষও শুরু করেছেন।


সোনাগাজী উপজেলার কুটিরহাটের মাহবুবুল হক মেম্বারের সন্তান নূরের নাহার (৩২)। বিয়ে হয় ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়ার জাফর আহাম্মেদের সঙ্গে। বর্তমানে এই দম্পতির ঘরে রয়েছে তিন সন্তান।


নুরের নাহার বলেন, ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে দুইটি গরু নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। বর্তমানে খামারে ৫টি গরু রয়েছে। এর পাশাপাশি হাঁস মুরগির সমন্বিত খামার করছি।


নাহার বলেন, মাসে খামার হতে ১৫ হতে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। দুধ বিক্রয় করতে সমস্যা হয়। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকসময় গরুর খাদ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হয়। তবুও হাল ধরে রেখেছি।


তিনি বলেন, শুধু পুরুষের উপর সব সময় নির্ভরশীল না হয়ে চাইলে নারীরাও সমাজে ভালো কিছু করতে পারে। আমার মত অন্যরা নারীরাও এমন স্বনির্ভর হলে সমাজে মাথা উঁচু করতে বাঁচতে পারবে।


ফুলগাজী উপজেলার রাহেলা আক্তার (৩৮) ৫ লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে পাঁচটি গরু নিয়ে শুরু করেন খামার। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ১৩টি গরু। রাহেলা জানান, খামার থেকে দুধ বিক্রির অর্থ দিয়েই আমার সংসার চলছে।


তিনি বলেন, আমাদের জন্য যদি স্বল্প সুদে সহজ পদ্ধতিতে ঋণ সুবিধা দেওয়া হত, তাহলে আমরা আরো উদ্যেগী হতে পারতাম।


জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আনিসুর রহমান নারী উদ্যোক্তাদের প্রসঙ্গে বলেন, ফেনীর ৬ উপজেলাতে নারী উদ্যোক্তারা খামার করছেন। প্রাণিসম্পদ দপ্তরে তারা প্রয়োজন হলে আসেন।


জেলায় স্বনির্ভর নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলা যাবে না তবে দেড়শ শতাধিক নারী খামারী আমাদের কাছে প্রাণির চিকিৎসা ও পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করেন।