পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ফেনীতে পলিথিন বন্ধ করার ঘোষণা প্রদান করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান। আজ শুক্রবার (৬ মার্চ) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় পাট দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন তিনি।


সভায় পলিথিন বন্ধের ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের নির্দেশ প্রদান করেন তিনি।


পাটের বহুমুখী ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে মোঃ ওয়াহিদুজজামান বলেন, পাট বর্তমানে কেবল দড়ি, চট বা বস্তা তৈরির আঁশ নয়। পাট থেকে বর্তমানে ২৮১ ধরনের বহুমুখী পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। সর্বাধুনিক মডেলের গাড়ির বডি, ঢেউটিন ও অন্যান্য উপাদান তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।


এসময় পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করে জেলা প্রশাসক বলেন, ধান, চাল, গমসহ ১৯টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।


সভায় পরিবেশের উপর পলিথিনের বিরূপ প্রভাবের ক্ষতিকর দিকসমূহ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিজেরা আগে সচেতন হলে পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। জেলা প্রশাসক বলেন, পাট আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি। আমরা চাইলে পাটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ব্র্যান্ডিং হিসেবে দাঁড় করাতে পারি।


পাট শিল্পের ধ্বংসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জেলা প্রশাসক বলেন, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে দেশের প্রধান কারখানা আদমজী জুট মিলসহ বিভিন্ন কারাখান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসময় ফেনীর দোস্ত মোহাম্মদ মিলের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।


পাটশিল্পের পুনঃ জাগরণে সকলের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ কামনা করে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আমরা আমাদের সম্পদকে সর্বোচ্চভাবে ব্যবহার করব। এসময় সভায় উপস্থিত সকলকে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে শপথ গ্রহণ করার আহ্বান করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে তুলতে উপস্থিত শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।


সভায় বাজার কমিটি ও ফেনী পৌরসভার কোন প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, আজকের এ সভায় তাদের উপস্থিত থাকার দরকার ছিল। কিন্তু তারা কেউ আসেনি।


জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাছলিমা শিরীনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছাঃ সুমনী আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন চৌধুরী, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুস সহিদ, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম, জেলা ত্রান ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন, জেলা খাদ্য গুদামের তত্ত্বাবধায়ক মোঃ শাহীন মিয়া। এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট গোলাম জাকারিয়াসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পাট অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোঃ জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, পাটের শতভাগ ব্যবহার ও ব্যবহার নিশ্চিত করলে পারলে হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে। এতে কৃষকরা যেমন লাভবান হবে, তারা লাভবান হলে দেশ এগিয়ে যাবে।


সভার আগে ‘সোনালী আঁশের দেশ, মুজিববর্ষে বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স হতে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।