এবার জেএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল স্বর্ণার (ছদ্মনাম)। অনলাইনে স্কুলের মূল্যায়ন পরীক্ষা দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দাদীর সঙ্গে ফেনী থেকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় ফুফুর বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। এর তিনদিনের মাথায় রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) নিজের ফুফাতো বোনের বান্ধবীর ‘ফাঁদে পড়ে’ সুপারিওয়ালাপাড়ার একটি বাসায় ধর্ষণের শিকার হন স্বর্ণা। যার হাতে এ কিশোরী ধর্ষিত হন সেই লোক ‘পুলিশের সোর্স’।
ঘটনার পর পুরো একটি দিন পার হয়ে গেলেও ধর্ষণের মূল হোতা ‘পুলিশের সোর্স’ সেই চান্দু মিয়া রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তার বিরুদ্ধে ‘পুলিশের সোর্স’ পরিচয় দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও যে দুজন বর্তমানে ডবলমুরিং থানা পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন, তাদেরও আটক করেছে ধর্ষিত কিশোরীর স্বজনরাই।
জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় স্বর্ণার ফুফাতো বোনের বান্ধবী নুরী বেগমের (২০) দাওয়াতে সুপারিওয়ালাপাড়ার একটি বাসায় যান স্বর্ণা ও তার ফুফাতো বোন রত্না (ছদ্মনাম)। নুরী বেগম নিজের বাসায় নেওয়ার কথা বলে বিকেল ৫টার দিকে তাদের দুজনকে যে ভবনে নিয়ে যান, সেটি মূলত চান্দু মিয়া নামের এক ‘পুলিশ সোর্সে’র বাসা।
ধর্ষিত কিশোরীর স্বপ্নার ফুফা জানান, ওই ভবনে নিয়ে গিয়ে নুরী বেগম কৌশলে স্বর্ণা ও রত্নাকে আলাদা দুই রুমে আটকে রাখে। একপর্যায়ে তার মেয়ে রত্নাকে নিয়ে নুরী বেগমের স্বামী অন্তর (২৫) ‘বাইরে’ চলে যান। এরপর ভবনের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দিয়ে ওই ভবনেই স্বর্ণাকে ধর্ষণ করেন চান্দু মিয়া। ধর্ষণ শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্বর্ণাকে তার ফুফুর বাসার পাশে এনে ফেলে রেখে যান নুরী বেগম।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, নুরী বেগমের স্বামী অন্তরের সঙ্গে সেই বিকেলে ‘বাইরে’ চলে গেলেও রত্না বাসায় ফিরেন রাত সাড়ে ১০টার দিকে। মাঝের এই সময়টায় রত্না কোথায় ছিল এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট জবাব জানা যায়নি রত্নার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে। প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের উত্তরে ধর্ষিত কিশোরী স্বপ্নার ফুফা ও রত্নার বাবা নিজেও ছিলেন নিরুত্তর।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসায় ফেরার পরই স্বর্ণা তার ফুফুকে সবকিছু খুলে বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে গিয়ে প্রথমে সুপারিওয়ালাপাড়ার বাসা থেকে নুরীকে আটক করেন স্বর্ণার স্বজনরা। পরে মোবাইল নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নুরীর স্বামী অন্তরকে ডেকে আনা হয় ওই বাসায়। স্বর্ণার স্বজনরা এ সময় তাকেও আটক করে। দুজনকে আটক করার পর ডবলমুরিং থানায় খবর দেয় স্বর্ণার স্বজনরা। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে রোববার দিবাগত রাতে ধর্ষক চান্দু মিয়ার সহযোগী মো. রাজিবকে (২৩) আটক করে।
ধর্ষণের শিকার কিশোরী স্বর্ণা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন। এই ঘটনায় ভিকটিম স্বর্ণার মা বাদি হয়ে ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির পশ্চিম বিভাগের উপ-কমিশনার ফারুক উল হক বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় চান্দু মিয়া নামে একজন জড়িত রয়েছে। সে পুলিশের সোর্স ছিল এমন কোন তথ্য আমাদের জানা নেই। তবে এই বিষয়টি আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। ঘটনায় জড়িত সকলকেই গ্রেপ্তারে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’
কৃতজ্ঞতাঃ চট্টগ্রাম প্রতিদিন